
বিশেষ প্রতিবেদক:টেকনাফ বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী গড়ে উঠেছে অবৈধ পথে মালয়েশিয়া আদম পাচার নেটওয়ার্ক। দেশের প্রায় উপজেলা শহরে তাদের জাল প্রসারিত করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রায় ১ হাজার দালাল। সেন্টমার্টিনের পূর্ব-দক্ষিণ সমুদ্রসীমায় সারা বৎসরই নোঙ্গরে থাকে কয়েকটি জাহাজ। ১৭ নভেম্বও সন্ধ্যায় সেন্টমার্টিন বঙ্গোপসাগর থেকে আটক মানব পাচারের জাহাজ ৬২৫ জন মালয়েশিয়াগামীসহ চট্টগ্রাম পৌছেছে। জাহাজটি আটকের পর থেকে টেকনাফের মানব পাচারকারী দালালদের মনে শান্তি নেই। মানব পাচারকারীরা বর্তমানে শংকিত হয়ে পড়েছে। যদি তাদের বিরুদ্ধে অভিযান হয়, এমন ভয়ে কাঁপছে তারা। বুধবার বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে জাহাজটি নগরীর পতেঙ্গা এলাকার ১৫নম্বর ঘাটে ভিড়ে। সেখান থেকে আটককৃতদের নৌবাহিনীর রেডি রেসপন্স বার্থ এ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আটককৃতদের মধ্যে ৫৫৫ জন পুরুষ, ৩১ জন নারী, ২৬ জন শিশু, ৬ জন পাচারকারী ও ২ জন দালাল চক্রের সদস্য রয়েছে বলে নৌবাহিনী সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আটককৃতদের মধ্যে ৯০ শতাংশই বাংলাদেশী, বাকিরা মিয়ানমারের নাগরিক।
সোমবার বিকেল চারটার দিকে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে গভীর সাগর থেকে মিয়ানমারের পতাকাবাহী একটি জাহাজসহ তাদের আটক করা হয়।
আটকদের তালিকা প্রণয়ন ও কোন দালালের মাধ্যমে পাচার হয়েছে সব বিষয়ে খতিয়ে দেখবেন বলে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে।
টেকনাফ উপকূলীয় এলাকার চিহ্নিত কয়েকটি ঘাট ছাড়াও মহেশখালী এবং চট্টগ্রাম হয়ে ছোট ফিশিং বোটে করে জমায়েত করা হয় সেন্টমার্টিনের সমুদ্রসীমায় অপেক্ষমান সেই জাহাজে। যেসব দালাল কোন কিছুতেই ভয় না করে হরদম আদাম পাচরের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সে সব দালালদের সিংহ ভাগের রয়েছে ডজন মামলা। এব্যাপারে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা ও সি মোখতার হোসেন জানান- আদম পাচার ও ইয়াবা ব্যবসায়ী চক্রের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান চলছে চলবে, দালাল যতই রাগব বোয়াল হউক না কেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত থাকবে। আদম পাচার ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে কোন আতাত নেই। তাদের দেখলে থানায় খবর দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগীতা করতে বলেন।
সেন্টমার্টিনের অদূরে জাহাজ এনে ব্যবসা করেন এমন ব্যক্তি রয়েছে মাত্র কয়েক জন। তাদের মধ্যে রয়েছে বার্মার আবদুল হামিদ, তিনি থাকেন কোয়ালালামপুর পুইশ্যং, শাহপরীরদ্বীপের আবদুল জলিলের পুত্র আবদুল আমিন ও বার্মার সানা উল্লাহ, তিনি শাহপরীরদ্বীপ থেকে উখিয়ার সোনা পাড়ায় বাড়ী করেছে। ৩ জনই মালয়েশিয়া থেকে আদম পাচারে জাহাজের ব্যবসা করে। বিশ্বস্থ তথ্যের ভিত্তিতে বেরিয়ে আসে অনেক দালালের বিশেষ তথ্য: বিশেষ করে টেকনাফ কেন্দ্রিক যারা আদম পাচারের সাথে প্রকৃতভাবে জড়িত । একাধিক ব্যাক্তির সাথে কথা বলে ও সরেজমিন ঘুরে যাদের নাম বারবার দালাল হিসাবে অনু সন্ধানী রিপোর্টে বেরিয়ে এসেছে তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে।
টেকনাফ শীল বনিয়া পাড়ার হেফজুর রহমান প্রকাশ হেফজ মাঝি গং এর মোহাম্মদ মাঝি, আবদুল মাজেদ, শাহেদ কামাল, নাইথ্যংপাড়া এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গা নাগরীক প্রবাসী জাফর আহমদের স্ত্রী হাসিনা বেগম, মেয়ের জামাই পুরান পল্লান পাড়ার নুর হাফেজ। হেফজ মাঝি থাকে চট্টগ্রাম, সে খান থেকেই তিনি কাজ চালান।
কচু বনিয়া এলাকার- মকবুল আহমদের ছেলে আবদুল করিম, আবদুল করিমের ছেলে আবদুল্লাহ, আবদুর রহিম মাঝির ছেলে নজির আহমদ, নজির আহমদ, ফছল আহমদের ছেলে মোঃ ইসলাম (বাঘু), আবুল কালাম, ইমান শরীফের ছেলে রশিদ উল্লাহ ডাইলা, ছিদ্দীক আহমদের ছেলে ইমাম হোছন, কবির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আমিন , মৌ. বশির আহমদ, শফি আহমদের পুত্র জাহেদ হোসেন আবদুল মাজেদের ছেলে শওকত ফারুক,আবদুল মালেকের পুত্র ফরিদ আহমদ, জলাল আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ইদরিস মুন্না, মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে আবু বক্কর, নজির আহমদের পুত্র ইসমাইল,দরবেশ আলীর ছেলে বাক্কু, দিল মোহাম্মদের ছেলে মোঃ শফিক, কালা মিয়ার ছেলে হাবিবুর রহমান, সামশুল আলমের ছেলে জাফর আলম, মৃত আমির হোসেনে ছেলে মোং রফিক, নজির আহমদের পুত্র আবদু সালাম, সোলতান আহমদের পুত্র শাহজাহান ওজাবেদ,আবদুল করিমের ছেলে আবদুল্লাহ,
কাটা বনিয়া এলাকার- কালাপুতুর ছেলে আবদুল্লাহ, মোঃ হোছাইনের পুত্র জাফর আলম, আবদুল মাবুদের পুত্র আবদুর রহিম, সৈয়দুর রহমানের পুত্র ছলামত উল্লাহ, কালু মিয়ার পুত্র আবুল কাশেম বাদ ও ভাগিনা মীর আহমদ,শহর মুল্লুকের পুত্র আবদুল্লাহ,হারিয়াখালী নোইল্যার পুত্র ভোট্টো, আবদুল হকের পুত্র নুরুল আলম, আ.রহমানের পুত্র কামাল, আবদুল মাজেদের পুত্র আলমগীর, সুফী আহমদের পুত্র জাহাঙ্গীর। কোয়াইন ছড়ি পাড়ার- মীর আহমদের পুত্র খল্যা মিয়া, এজাহার মিয়া, নজির মাঝি, জহির আহমদ, শাহেদ কামাল ও আক্তার কামাল। টেকনাফ সদরের হাবির ছড়ার শফির পুত্র মোহাম্মদ হোসাইন ও নুরুল ইসলাম, উত্তর লম্বরী এলাকার মোহাম্মদ তৈয়ব ও সোনা মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ ইদ্রিস, মোহাম্মদ আলম ও জাহাঙ্গীর। চিটাগাং হালি শহরের সলিম মাষ্টার, মহেশ খালির আশরাফ আলী, মচুনি ক্যাম্পের আমান উল্লাহ , নরসিংদি হাইল মারার মক্কু মিয়ার পুত্র তুষার, বাহার ছড়া শীল খালীর ফারুক, সাবরাং মুন্ডার ডেইলের শাকের, নজির মেম্বারের ছেলে আবদুল মাজেদ, আবদু শুকুর, মোসা আলীর পুত্র অলী আহমদ, আমির হোসেনের পুত্র জিয়ারু, কোয়াইনছড়ি পাড়ার আবদুলের পুত্র বশির আহমদ। সদর ইউনিয়নের হাবির ছড়ার শফীর পুত্র মোহাম্মদ হোছন ও নুরুল ইসলাম , মোচনী নয়াপাড়া-২ ক্যাম্পের এইচ ব্লকের আমান উল্লাহ, বি ব্লকের মলই ছানা উল্লাহ, সি ব্লকের আব্দুস শুক্কুর প্রকাশ কালা শুক্কুর, মলই নুরুল হক, দাড়ি মাআচ্ছালাম, গড ফাদার আমান উল্লাহ, নাজিম উদ্দিন, চিহ্নিত গড ফাদার ও গুরা মিয়া, নুরুল হাকিম কাপড় বেপারী, মাষ্টার আমির হাকিম, শাহা আলম, নুরুল বশর, মলই কামাল, মাষ্টার হাবিবুল্লাহ, এইচ ব্লকের মুহামুদুল হাসান, হাসন, বি ব্লকের আমান উল্লাহ, সি ব্লকের চেয়ারম্যান ছাবু। লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক এ ব্লকের আদম পাচারকারী সিন্ডিকেটের প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের তালিকা ভুক্ত ইয়াবা ডিলার ডাঃ কবীর, দক্ষিণ আলীখালী এলাকার গবী সোলতানের পুত্র মলই মোহাম্মদ মিয়া, লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি ব্লকের জাহেদ, সি ব্লকের নাজির হোছন, ডি ব্লকের আব্দু করিম, ই ব্লকের মো: শফি মাঝি, ই ব্লকের নুরু, বি ব্লকের আবু ছিদ্দিক, সি ব্লকের বাইল্যা ও হামিদ হোছনের নেতৃত্বে বিশাল একটি সিন্ডিকেট মাসের পর মাস এভাবে মালয়েশিয়া আদম পাচার করে আসছে। হ্নীলার রঙ্গিখালী এলাকার মৃত আব্দুল হাকিমের পুত্র আদম পাচারের অন্যতম হোতা দুদু মিয়া, মৃত আলী হোছনের পুত্র ঠান্ডু মিয়া, নাদির হোছনের পুত্র রশিদ আহমদ, সাজেদার বাপের পুত্র আব্দুল্লাহ, মৃত বদিউর রহমানের পুত্র নুর মোহাম্মদ, মৃত সুলেমানের পুত্র কালু ও তার বোন ছুরা খাতু। জাদীমুরা এলাকার বার্মায়া জাফর, লেং কবির, বাছা মিয়ার পুত্র ছৈয়দ হোছন, তাজর মুল্লুকের পুত্র নুরুল ইসলাম, মলই আব্দু সালাম। হ্নীলা ফুলের ডেইল এলাকার কাষ্টমস ঘাটের চৌকিদার আনসার হোসনের পুত্র শীর্ষ পাচারকারী জাহাঙ্গীর আলম, বার্মাইয়্যা শামশু, পশ্চিম সিকদার পাড়া এলাকার আবু তাহের সওদাগর, গিয়াস উদ্দিন। শাহপরীরদ্বীপ ধলো হোছন, ইউনুছ, শরীফ হোছন, নুর হোসন, মো: ইসমাঈল, আবু তাহের, দেলোয়ার হোছন, আবুল কালাম, শাহাব মিয়া, হাফেজ উল্লাহ, ছৈয়দুল্লাহ, জাহেদুল্লাহ, মুজিবুল্লাহ, ফয়েজুল্লাহ মাঝি, নুর হাকিম মাঝি, মো: ইলিয়াছ মাঝি। সাবরাং এলাকার ইমাম হোছন, ঝিমা কাশেম। শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিম বাজার পাড়ার আলী আহমদের পুত্র কাইসার, মাঝরপাড়া বাটুর ছেলে ফিরুজ মিয়া, বাজারপাড়ার ধলু হোছন ও তার ছেলে বেলাল, দক্ষিণ পাড়ার নূর হাকি, পোয়া মাঝি, আমান উল্লাহ মাঝি, নুরুল আমিন,আবু জামিল, আবদু শুক্কুর, দক্ষিণ পাড়ার আমিন উল্লাহ ও কবিরা হাবিব উল্লাহর পুত্র রহিম উল্লাহ ।
আবদুল গফুরের পুত্র মোস্তাক আহমদ,নুর আহমদের পুত্র সাদ্দাম হোসেন, আবদুল হাশিমের পুত্র ভুট্টো, কবিরার পুত্র আমানুল্রাহ, আবদুল গনির পুত্র ইসমাইল, সোলতান আহমদের পুত্র বশির আহমদ ও শাহ জাহান, পানছড়ি পাড়ার মোহাঃ ইউনুছের পুত্র মোহাম্মদ তৈয়ুব।
এ ছাড়াও আরো দালাল থাকতে পারে। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যাবস্থা গ্রহণ করলে টেকনাফ থেকে অবৈধভাবে সাগর দিয়ে মালয়েশিয়া আদম পাচার বন্ধ হবে বলে মনে করেন সচেতন মহল। এদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে ডজন ডজন মানব পাচার মামলা থাকলেও তারা ধরাছোয়ার বাইরে থেকে নিরাপদে ব্যবসা কিভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসীর প্রশ্ন? আদম পাচারকারীরা দেশের শত্রু তাদের আইনের আওতায় আনার দাবী সচেতন মহলের।
::টেকনাফ নিউজ
পাঠকের মতামত